ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তিইচ্ছুক সকল শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস থাকে বুয়েট, তথাপী আসন সংকট ও পছন্দের সাবজেক্ট না পাওয়ার কারনে অনেকের কপালেই সেই সৌভাগ্যের মুকুটটি অলংকৃত হয় না! আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি!
সেই হতাশার গ্লানি নিয়ে নুতন ক্যাম্পাসের প্রতি অনুরাগি হতে না হতেই অনেকে চারটি বছর পার করে দেয়। অনেকেই আমার পরশ্রীকাতর হয়ে পরে। সত্যি বলতে দূর থেকে কাশফুল একটু বেশিই ঘন মনে হয়। বাস্তবতা হল আসলে কেউই নিজের পজিশনে সুখি নয়। বুয়েটের অনেকেই হয়ত পছন্দের সাবজেক্ট না পাওয়ার কারনে, মেডিকেলের হয়ত অনেকেই ঢাকার তিনটাতে চান্স না পাওয়ার কারনে কিছুদিন হতাশায় ভোগে, যদিও কিছু দিনের মধ্যেই তারা সেই হতাশা ওভারকাম করতে পারলেও আমাদের সেই হতাশা পুরো স্টুডেন্ট লাইফ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কারন বুটেক্সের মত বোরিং ক্যাম্পাস ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার সন্দেহ!!?
তবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার নিয়ে এটাই বলব, আমাদের একটা নিজস্ব সেক্টর আছে যেটা অনেক ইঞ্জিনিয়ারদেরই নেই এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩% আমাদের সেক্টর থেকেই আসে।এই সেক্টরে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে জব লাইফ তথা বিজনেস লাইফ এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
সেক্ষেত্রে প্রথমেই দরকার সাবজেক্টির প্রতি অগাদ ভালবাসা কারন কোন সাবজেক্টের প্রতি ভালবাসা না থাকলে সেই সাবজেক্ট এ পাস করা গেলেও ডিপ কন্সেপ্ট অর্জন করা যায় না!
পরিতাপের বিষয় হল অনেকেই দেখা যায় অন্যদের ক্যাম্পাসের প্রতি প্রতি পরশ্রীকাতর হতে গিয়ে নিজের সেক্টরের সুন্দর ক্যারিয়ারটাই নস্ট করে ফেলে।
তাদের জন্য এটাই বলব পাশের বাসার ভাবিকে একটু বেশি সুন্দর লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আলটিমেট পিচ লাভ করতে হলে ভাবির দিকে না তাকিয়ে নিজের বউকেই লাভ করা উচিত। নতুনদের প্রতি আমার উপদেশ এভাবে হতাশ না হয়ে যেখানে আছ সেখান থেকেই নিজেকে ডেভলপ কর, দেখবে সফলতা তোমার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিবে।
আমার দুটো ফেভারিট কোটেশন অ্যাড করে দিলাম।
• Don’t run after Money, Try to develop yourself, Then money will run after you.
• Life is not a bed of roses, you can consider only two months after your marriage as a bed of roses, after that reality will appear at the door.
আমরা ইঞ্জিনিয়াররা হয়ত অনেকেই আমাদের কাজ মেশিন অপারেট করা ভেবে ভুল করে থাকি!! মেশিন অপারেট করা আমাদের কাজ না, ওটা টেকনোলজিস্টদের কাজ, আমাদের কাজ মেশিন ডেভলপ করা তথা প্রোসেস ডেভলপ করা,প্রোডাক্ট ডেভলপ করা! আমরা কিছু কমন প্রোডাক্ট তৈরী করতে পারলেও এখনো কোন ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরী করতে পারছিনা, ফলে ওয়ার্ল্ড মার্কেটের মোস্ট প্রফিটাবল অর্ডার গুলো হারাতে হচ্ছে। প্রসেস ডেভলপ করতে নাই পারলাম অন্তত নতুন নতুন প্রোডাক্ট ডেভলপ করতে পারলেও আমরা আমাদের প্রোডাক্টের প্রাইজটা ওয়ার্ল্ড মার্কেটে নিজেরাই সিলেক্ট করতে পারতাম, এখনকার মত বায়ারদের সেম্পল নিয়ে সর্বনিম্ন প্রাইজে প্রোডাকশনে যেতে হত না আর ওয়ার্ল্ড মার্কেটেও বাংলাদেশকে ‘চিপ গার্মেন্টস ভিলেজ’ হিসেবে পরিচিত হতে হত না।।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের জব ডাইভারসিফিকেশন এখন সময়ের দাবি। সেই গতানুগতিক পন্থায় কিছু কম্পানিতে প্রোডাকশন অফিসার অথাবা মার্সেণ্টডাইজার হিসেবে এক পাল গরুর মত জয়েন করা ছাড়া বিকল্প কোন চিন্তাও আমাদের মাঝে নেই। সেখানে আমাদেরকে শ্রমিক হিসেবে ট্রীট করা হয় বললেও খুব বেশি ভুল হবে বলে মনে হয়না। পার্থক্য হয়ত একটাই শ্রমিকদের অভারটাইম স্যালারি দেওয়া হলেও আমাদের রাত দিন খাটালেও কোন ওভারটাইম নেই
,আমাদের ইনিশিয়াল স্যালারির কথা না হয় নাই বললাম, কারন আগেই বলেছি শুরুতেই টাকার পিছনে ছুটা যাবে না! তারপরও এটাই বলব অন্তত একটা মিনিমাম স্টান্ডার্ড থাকা দরকার যাতে কাউকে হতাশায় ভুগতে না হয়। আশা করব আমাদের আইটিইটির শ্রদ্বেয় সিনিয়র ভাইরা তথা শিল্পমালিকরা ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন!
আমাদের টেকনিক্যাল নলেজের পাশাপাশি করপোরেট নলেজ থাকাটাও অতীব জরুরি, কারন বিভিন্ন ম্যাল্টিন্যাশনাল বায়িং হাউজ এবং ডাইস ক্যামিক্যাল কম্পানিগুলোতে মার্কেটিং অফিসার এবং ফেব্রিক টেকনোলজিস্ট পদগুলোতে আমাদের রিক্রুটিং নেই বললেই চলে। মার্কেটিং অফিসার হিসেবে আইবিএ, নর্থ সাউথ, অথবা ফরেইনার স্টুডেণ্টদের নেওয়া হলেও আমাদের সেই সুযোগটি নেই, কিন্তু সেক্টরটা আমাদের হওয়ায় জবগুলো আমাদের পাওয়ার থাকলেও আমাদের কোয়ালিটির সীমাবদ্বতার কারনে সেই জব গুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফেব্রিক টেকনোলজিস্ট, গার্মেণ্টস টেকনোলজিস্ট, কালার টেকনোলজিস্ট, ওয়াশ টেকনোলজিস্ট হিসেবে বিদেশীদের পাশাপাশি আমাদের রিক্রুট করা হলেও ফেশারসদের জন্য সেই সু্যোগটি নেই বললেই চলে। তথাপি গত বছর থেকে আমাদের কিছু ফ্রেশারস ভাইয়া আপুদের অক্সিলন, জি-স্টারের মত ম্যাল্টিন্যাশনাল বায়িং হাউসগুলোতে রিক্রুট করাটা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ যেন আমাদের এক নতুন স্বপ্নের হাতছানি!!
অনেকেরই অভি্যোগ বুটেক্সকে সাধারন জনগন চিনে না, এটা সত্য বুটেক্স এখনো এতটা পরিচিত ব্রান্ড হয়ে উঠেনি, তবে এটাও ঠিক পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে, কোন প্রতিষ্ঠানকে ব্রান্ড হয়ে উঠার পিছনে থাকে সেই প্রতিষ্ঠানের অনেক স্টুডেণ্টের নিরলস প্রচেস্টা এবং অক্লান্ত প্ররিশ্রম। প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল যারা সেই ব্রান্ড তৈরী করেছে, পরবর্তিতে যারা সেই ব্রান্ড নেইম ইউজ করে শুধুই সুবিধা নিতে চেয়েছে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেনি!
নুতনদের প্রতি অনুরোধ ক্যাম্পসটিকে ব্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে সদা সচেস্ট থাকবে, সেক্ষেত্রে দুইটা পন্থা, একটি হল করপোরেট লেভেলে পরিচিত করতে হলে নিজেদের কিছু DISTINCTIVE CHARACTERISTICS থাকতে হবে।জব সেক্টরে নিজের এক্সিলেন্সি শো করতে পারলে অটোমেটিক তোমার ক্যাম্পাস পরিচিতি পাবে, অন্যটা হল মাস পাবলিসিটি, সেটার জন্য দরকার মিডিয়া ক্যাভারেজ, যদিও আগে স্টুডেন্ট কম থাকায় ওদের বিজনেস পলিসির কারনে আমরা খুব কমই মিডিয়া ক্যাভারেজ পেয়েছি। তথাপি প্রত্যেক ক্যাম্পাসের কিছু ছেলে এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়া অথবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে যুক্ত থাকে আমাদের সেটা নেই বললেই চলে, ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।
এখানকার স্টুডেন্টদের এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ হিসেবে নিয়মিত কয়েকটা মুভি দেখা ছাড়া আর কিছু আছে বলে জানা নেই। তবুও কেউ কোন উদ্যোগ নিলে একটি মহল প্রতিহিংসার কারনে সেটিকে বন্ধ করে দিবে। নেতৃত্বাধীন স্টুডেন্টদের প্রতি অনুরোধ নিজেদের কর্তিত্বকে হাসিল করতে গিয়ে অথবা প্রতিহিংসার বশবর্তি হয়ে নবীনদের প্রতিভাকে গলা টিপে হত্যা করনা, বরং নিজেরাই ক্রিয়েটিভ কিছু করার চেস্টা কর, নতুনদের ভাল পথে উৎসাহিত কর অন্তত বিপথে পরিচালিত কর না।।
“বদলে যাও নিজেরা, বদলে দাও নবীনদের”
বুটেক্স ক্যাম্পাস এবং বুটেক্সিয়ানদের মাঝে যে আত্মার এক নিবিড় বন্ধন রয়েছে সেটা অন্য কোন ক্যাম্পাসে আছে বলে আমার জানা নেই, এইতো সেদিন রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্যাম্পাসের জন্মদিন পালন করতে ব্যার্থ হওয়ায়, কিছু জুনিয়রদের আহবানে সাড়া দিয়ে সিনিয়র জুনিয়র সকলেই ভার্চুয়াল জন্মদিন পালন করলাম সকলে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকে বুটেক্সের লোগো ইউস করার মাধ্যমে। বুটেক্সের সাথে আমাদের সম্পর্ক এতটাই ঐকান্তিক যে মৃত্যুর পরেও জানাযাটা বুটেক্স ক্যাম্পাসেই হয়ে থাকে, ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবন এমনকি মৃত্যুর পরও এক অবিচ্ছিন্ন অদৃশ্য মায়াজালে বুটেক্স ক্যাম্পাসের সাথে আবদ্ধ থাকি আমরা!
কর্মজীবনে আমরা যতটাই সফল হইনা কেন নিজেকে একজন বুটেক্সিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করি। সুতারাং আমারদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মিশন, ভিশন একটাই সেটা হল বুটেক্সের ব্রান্ড ভ্যালুকে আন্তঃজার্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। টেক্সটাইল সেক্টরে আমাদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা, কারন বর্তমানে এই সেক্টর থেকেই আমরা প্রায় ২৫ বিলিয়ন ইউ এস ডলার রেভিনিউ অর্জন করছি। আমাদের রয়েছে দক্ষ শ্রমিক, শত বছরের মসলিনের ঐতিহ্য, আমাদের মেয়েরা হয়ত জেনেটিকালি সুই সুতার কাজে দক্ষ, তাইতো অশিক্ষিত কোন মেয়েকে মেশিনের সামনে বসিয়ে দিলেই অল্প দিনের মধ্যেই দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে উঠে।
এবার আসি ক্যাম্পাস ও এর পারিপার্শিক অবস্থা থেকে বুটেক্সিয়ানরা কি শিখছেন। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে বুয়েটের প্রথম সারির সাবজেক্ট গুলোর পরেই মেধাবি স্টুডেন্ট গুলো বুটেক্সকে প্রেফার করে। হয়ত এক বুক স্বপ্ন নিয়েই তাদের আগমন ঘটে এবং অচিরেই তাদের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।
কারন হল লাইফের শুরুতেই র্যাগিং নামক মানসিক নির্যাতন, নোংড়া ও নস্ট,ভ্রষ্ট রাজনীতির ফাদ, গুনধর শিক্ষকদের অদ্ভুদ লেকচার প্রদান পদ্ধতি, সিনিয়রদের থেকে টেক্সটাইলে কোন পড়াশুনা নেই, শুরুতেই লক্ষাধিক টাকা বেতন পাবার গল্প, , আর সেটা পাবার জন্য সিনিয়রদের সাথে রিলেশনশীপ বিল্ড আপ করলেই যথেস্ট। এভাবেই বড় ভাই নামক অদ্ভুদ, অন্ধ, পাগলা ঘোড়ার পিঠেই সাওয়ার হচ্ছে কোমলমতি জুনিয়ররা, আর এভাবেই পাড়ি দেয় স্টুডেন্ট লাইফের চারটা বছর।
ছাত্ররাজনীতি যারা করেন তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, কেউ কি বলতে পারবেন এই অসুস্থ, নোংড়া রাজনীতি যার জন্য আপনি ভার্সিটি লাইফের অধিকাংশ সময় ব্যয় করলেন সেটা থেকে থেকে আপনি এমন কি কিছু শিখলেন যেটা আপনার কর্মজীবনে কাজে দিবে
আমার সমসাময়িক যতগুলো ব্যাচ দেখেছি, ফাইনাল ইয়ারে এসে ফরেন ট্যুর কোঅর্ডিনেটর তার কাছের দু এক জনকে নিয়ে স্পন্সরের টাকা গুলো নিয়ে ভেগে যায়, সাধারন ছাত্রছাত্রীদের কথা বাদই দিলাম এত্তদিন যেসব জুনিয়রদের নিয়ে রাজনীতি করে ট্যুর কোঅর্ডিনেটর হল, তাদের কথাও ভুলে যায়। সাধারন ছাত্রছাত্রীদের অইসব ট্যুরে পার্টিসিপেইট করতে কখনো দেখিনি। আপনি ক্ষমতাসীন দলের বুটেক্স ক্যাম্পাসের ছাত্র- এর সভাপতি অথবা সেক্রেটারি কর্পোরেট সোসাইটিতে এই পরিচয়টা কি দিতে পারবেন কখনো, সাধারন মানুষ রাজনীতিকে যে ঘৃনা করে, এই পরিচয় আপনার ক্যারিয়ারের ক্ষতি করবে উপকার তো দুরেই থাক। তাই জবের সময় সাধারন স্টুডেন্টদের থেকে এইসব ব্রান্ডধারীদেরকেই জুতোর তলা একটু হলেও বেশি নস্ট করতে হয় কারন ভার্সিটি লাইফে ওনারা রাজনৈতিক শিক্ষা ছাড়া প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা কিছুই লাভ করেননি। ছোটবেলায় যা শিখে এসেছেন সেটাও হয়ত ভুলতে বসেছেন। আপনারা জাতির মেধা, জাতির বিবেক, আপনারা যদি এইসব নস্ট ভ্রস্টদের সাথে রাজনীতি করেন তবে ঢাকা কলেজ, তিতুমির কলেজ, বাংলা কলেজের ছেলেরা কি করবেন।
এবার টিচারদের কথায় আসি, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কলকাতার ‘ক’ নামক এক ভদ্রলোকের সাথে কিছু সময় কাটানোর। আমি ইন্টারস্টফে থাকাকালীন উনি NABL থেকে এসেছিলেন ক্যালিব্রেশন এবং অ্যাক্রিডিটেশন পারপাসে। উনি ইন্ডিয়ান আই আই টি থেকে ইন্সট্রুমেন্টাল এন্ড ক্যালিব্রেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি, এবং এম আই টি থেকে পিএইচডি করেছেন। তার হোস্ট হিসেবে আমি ওনার সাথে ২ দিন ছিলাম, আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম ওনার জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তাশক্তি ও বিচক্ষনতা দেখে। মনে হয়েছিল ওনার জ্ঞানের গভীরতা বুঝার মত জ্ঞানের ছিটেফোটাও আমার মাঝে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যেটা দেখেছি ইয়ং টিচাররা অনেক বেশি স্মার্ট, অনেক বেশি তৎপর ও দুরদর্শী। অনেক ক্ষুধা তাদের জ্ঞান আহোরন ও বিতরনের ক্ষেত্রে কারন একটাই তারা শিক্ষকতাকেই এবং জ্ঞানচর্চাকেই মহান ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর বুটেক্সের কিছু সিনিয়র টিচার ছাড়া অধিকাংশদের অবস্থাই যাচ্ছেতাই। কোন যোগ্যতার বলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন সেটা ভেবে আমি নিয়েই সন্দিহান।
মুখস্থ করে একাডেমিক কিছু সার্টফিকেট অর্জন করে এবং টিচার হিসেবে যোগদান করেই ভাবেন তারা অশেষ পান্ডিত্ব হাসিল করে ফেলেছেন, তাই হয়ত তারা জ্ঞানচর্চাকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। সেটার প্রমান আমরা তাদের ক্লাসে লেকচার দেখেই বুঝতে পেরেছি। অথচ যুগ এগিয়ে যাচ্ছে, মর্ডান টেকনোলজি আসছে, আমাদের কারিকুলামেও আধুনিকতার ছোয়া থাকা আবশ্যক, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চোথা থেরাপির আধিক্য, হয়তো এই থেরাপি গুলোও ওনাদের নিজেদের না, ওনাদের সময়ের টিচারদের দেওয়া। হয়তো অই টিচারও তার টিচার থেকে নিয়েছিলেন, তিনি হয়তো তার......... এভাবেই শতাব্দি পেরোলেও আমরা চোথার বলয় থেকে বের হতে পারছিনা।
বাংলাদেশে আমি অনেকে স্কলার, পি এইচ ডি হোল্ডারদের লেকচার শুনেছি, কিন্তু এমন কাউকে পাইনি যার জ্ঞানের গভীরতা শ্রদ্ধায় মাথা নত হবার মত। বুটেক্সের সন্মানিত টিচারদের কে বলছি, আপনারা সবই জানেন, আমার থেকে অনেক ভালই বুঝেন, তবুও এই অধম আরেকবার আপনাদেরকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই জ্ঞান আহরনের একমাত্র পন্থা হল জ্ঞানচর্চা।
এবার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের একমাত্র সংগঠন আই টি ই টি কে বলছি, আপনারা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রানের স্পন্দন, জীবনের মিলনমেলা। সিনিয়র নেতৃবিন্দদের বলছি আমরা আপনাদের থেকে আরো দায়িত্বপুর্ন ও সংবেদনশীল আচরন আশা করছি। আপনারা কর্মজীবনে অনেকে সফল, একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তথা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হিসেবে আপনারা অনেক সফল, আপনারা আমাদের গর্ব এবং অহংকার। কিন্তু আপনাদের প্রোগামগুলো অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতার মাঝেই সীমাবদ্ব। এক টাইপের গেট টুগেদার, সবাই কিছু আড্ডা দিয়ে, খেয়ে দেয়ে ফিরে আসলাম।
আমাদের প্রতি বছর স্টুডেন্টদের জন্য প্রোগাম হওয়া উচিত, নতুন ব্যাচের জুনিয়রদেরকে মোটিভেট করার জন্য, তাদেরকে লক্ষ্য, উদ্যেশ্য,মিশন, ভিশন গুলোকে নির্ধারন করতে সহায়তা করা, তাদেরকে ঞ্জান চর্চায় উৎসাহিত করা। তারা যেন আপনাদেরকে মেন্টর হিসেবে পায়। আপনাদেরকে আদর্শ ভেবে সেই লক্ষ্যে অভিষ্ট হবার ব্রত নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়টা হল আউটগুয়িং ব্যাচদের জন্য জব সেমিনার করা, তাদের জন্য সন্মানজনক স্যালারি নিশ্চিত করা, মনে রাখবেন আপনি যদি আপনার জুনিয়রকে সন্মান করতে না পারেন সেটা আপনার ব্যার্থতা, জুনিয়রদের নয়।
আইটিইটি প্রোগ্রাম থেকে সিনিয়রদের প্রায়ই শুনা যায় বুয়েটের ছেলেরা আমাদের থেকে কম স্যালারি পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অধীনস্ত হয়ে জব করে। তাদেরকে প্রায়ই ১-১০ লাখ টাকা স্যালারি পাওয়ার গল্প করতে শুনি।আমি তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই একমাত্র স্যালারিই কি কোয়ালিটি নির্নয়ের একমাত্র নিয়ামক! তাদেরকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই বুয়েটই একমাত্র ব্রান্ড হিসেবে বাংলাদেশি মানুষের কাছে স্থান করে নিয়েছে। আর ব্রান্ড হিসেবে স্থান করে নিতে হলে মেধা মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা এবং মানবীয় গুনাবলীর সন্নিবেশন থাকা দরকার। অবশ্যই বুয়েটের ছেলেরা আমাদের থেকে অনেক বেশী প্রতিভার অধিকারী।প্রতিভার ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করে দিতে চাই, প্রতিভা হল দুজনের সর্বোচ্চ প্রচেস্টা, সমান প্রতিষ্টানিক পরিবেশ এবং অন্যান্ন সুযোগ সুবিধা দেবার পরেও দুজনের মধ্যে মেধা এবং পারফরমেন্সের যে ব্যাবধান সেটাই হল প্রতিভা।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান একবার একটা সাক্ষাতকারে বলেছিল ‘আমি যদি আমার সারাটা জীবন আমার সর্বোচ্চ পরিমান চেস্টা করি তবুও আমি সাঈদ আজমলের মত বলার হতে পারব না, সর্বোচ্চ আমি গ্রায়েম সোয়ান হতে পারব। এই গ্যাপটুকুই হল প্রতিভা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নিজেদের নিজেদের প্রতিভা এবং সামর্থের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তাহলে আমাদের থেকে প্রতিভাবান অন্যান্ন কম্পিটিটরদের প্রোচেস্টার কখনো ঘাটতি হলে ওরা আমাদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। উদাহরন হিসেবে এটাই বলব বিসিএস সহ অন্যান্ন প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষায় অনেক সময় অনেক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরাও চান্স পায় আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী স্টুডেন্টরাও চান্স পায় না। আপনার মেধা, মননশীলতা,বিচক্ষনশীলতাই আপনাকে সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে মর্যদাবান করে তুলবে। শুধু স্যালারিই একমাত্র নিয়ামক নয়, ওই যে সিক্স ডিজিট (১-১০ লাখ) টাকা বেতনের গল্প শুনেন ওটা অর্জন করতে যে কতটা ত্যাগ, তীতিক্ষা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেস্টার দরকার হয় সেটার গল্প কি কাউকে বলতে শুনেছেন।
আমি বুটেক্সিয়ানদের বলব শুধু টাকার পিছনে না ছুটে নিজেকে ডেভলপ করেন, বড় ভাই থেরাপি না নিয়ে নিজেয়ে প্রশ্ন করেন কি হতে চান আপনি। চোথা থেরাপি বাদ দিয়ে রেফারেস্ন বই পড়েন। জানার জন্য, ঞ্জান অর্জনের জন্য শিখেন, শুধু পরীক্ষায় সিজিপিএ পাওয়ার মধ্যেই জীবনের চরম সার্থকতা নিহিত নয়। কারন শুধু সিজিপিএ আপনার ক্যারিয়ার স্টার্ট করার জন্য কাজে লাগতে পারে। কিন্তু সাবজেক্ট নলেজ আপনার সারাজীবন কাজে লাগবে। অনেকে বলে টেক্সটাইলের পড়াশুনা নাকি জব লাইফে কাজে লাগেনা , আমি বলব ওটা আপনার বেসিক, ওটা আপনার গ্রামার, যার বেসিকের উপরে ডেপথ নেই, সে কিছুই জানে না! জববে ভালবাসুন, প্রোফেশনকে ভালবাসুন, আপনার সাবজেক্টকে ভালবাসুন,ঞ্জান অর্জনকে ব্রত হিসেবে নেন, দেখবেন প্রভাব প্রতিপত্যি , অর্থ সম্পদ আপনার পায়ের কাছে এসে ধরা দিবে।
আপনাদের বলতে চাই এখনি সময় জাগ্রত হবার , অনেক গুলো টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি হতে এখন হাজার হাজার স্টুডেন্ট বের হচ্ছে। আপনারা ৪০০ বের হলে অন্যান্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ৪০০০ বের হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে টেক্সটাইল এরিনার কর্তৃত্ব আপনাদের হাত থেকে চলে যাবে। কষ্ট পাই এটা দেখে যখন আমার বুটেক্সের কোন ছেলে জব লাইফে ডিসটিংটভ কিছু প্রদর্শন করে ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টি আর্কষন করতে পারছে না। নন টেক অথবা অন্য ইন্সটিটিউটের ছেলেদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে চলছে, কারন ওরাও জানেনা, আর এরাও জানেনা।
কাছের মানুষটিকেই ফলো করতে চেষ্টা করেন, আপনারই অনেক বন্ধু আছে দেখবেন আপনার থেকে অনেক গুনাবলীতে উন্নত। ওর সবগুলো ভাল গুনাগুন অর্জন করতে চেষ্টা করেন, আমি আমার বুটেক্সের বন্ধু হাসানকে স্মরন করতে চাই, ওকে দেখে আমি অনেক বেশি ইন্সপায়ারড হই, কারন মেধা, মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষনতা, এবং সর্বোপরি মানবীয় গুনাবলীতে ও অনেকের থেকে উন্নত, আমিও চাই প্রচন্ড সাধনার মাধ্যমে আমার গুনগুলোকে উন্নততর করার জন্য।
আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করতে চাই বুটেক্সের মনোয়ার হোসেন পলাশ ভাইকে,যিনি বুটেক্সের স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করছেন,একজন মটিভেটর, একজন মেন্টর হিসেবে। অন্যান্ন সিনিয়র ভাইদেরকেও এভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
সবশেষে একটা টপিকস নিয়ে বলেই শেষ করতে চাই,
আমাদের টেক্সটাইল সেক্টরে কিছু ডিপার্টমেন্টে এখনো শ্রীলংকান এবং ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট আছেন। এবং তারা সবাই সমমর্যদার বাঙ্গালী ম্যানেজমেন্টের চেয়ে হায়ার স্যালারি ড্র করে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গার্মেন্টস প্রডাকশন,গার্মেন্টস প্লানিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস কোয়ালিটি, ওয়াশিং প্লান্ট, উইভিং সেক্টরে এদের আধিক্য দেখা যায়। কারন আমাদের ছেলেরা এসব সেক্টরে জয়েন করেনা বললেই চলে। কারন অন্ধের মত বড় ভাইদের ফলো করা সেটা আগেই বলেছি। মিনিমাম পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট ও বুঝে না। সবাই এক সেক্টরে গেলে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। আর টেক্সটাইল সেক্টর তো আর একটা ডিপার্টমেন্ট নিয়ে না, সকল ডিপার্টমেন্টই সমান, স্যলারি স্ট্রাকচারও সেইম, আপনি যদি ভাবেন ডায়িং থেকে এজিএম হতে ১০ বছর লাগবে তবে অন্য সেক্টর হতে এজএম হতে আরও কম সময় লাগবে, কারন ওখানে আপনার কম্পিটিটর আপনার থেকে অনেক কম কোয়ালিফাইড। শ্রীলঙ্কার এক একজন ডিপ্লোমা হোল্ডাররা যদি বাংলাদেশে এসে ৫ লাখ টাকা স্যালারি নিতে পারে, তবে আপনি কেন একজন বুটেক্স গ্রাজুয়েট হয়ে পারবেন না।
মনে রাখবেন ২৫ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের টেক্সটাইল এবং গার্মেণ্টস বিজনেসের সবকিছুরই অধিকার এবং কর্তৃত্ব একান্তই আপনার। এখনই সময় টেক্সটাইলের ছেলেদের এম বি এ করে, ফিনান্স,একাউনটস, কর্মাসিয়াল সেক্টর গুলোতে জয়েন করা। টেক্সটাইল ম্যানেজমেণ্ট ডিপার্টমেন্টটা চালু করা হয়েছিল ছেলেরা জাতে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেন, একজন এইচ আর জিএম এর টেক্সটাইল ইন্ডাস্টিতে কতটা প্রভাব সেটা জব করতে আসলেই বুঝতে পারবেন, ন্যাশনাল ইউনিভাসিটি থেকে যদি কেউ এইচ আর জিএম হয় তবে আপনি কেন বসে আছেন। অনেক ন্যাশনাল ইউনিভাসিটি থেকে পাশ করে কিছু প্রোফেশনাল কোর্স যেমন ICMA থেকে ডিগ্রি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কিছু না নিয়েই একটা কম্পানির CFO হচ্ছেন। আর ওনাদের কাছে একজন প্রডাকশন জিএম অনেকটাই অসহায়, তবে আপনি কেন বসে আছেন, আপনিও ফিনান্স সেক্টরে জয়েন করে ICMA থেকে ডিগ্রী নিয়ে হতে পারেন একজন CFO।
‘JUST THINK DIFFERNET, BE DIFFERENT’
যেটা বলছিলাম আইটিইটি অনেক প্রোগ্রামেই বক্তারা রাজনৈতিক মন্ত্রীদের কাছে দাবি জানান বাংলাদেশ থেকে এসব শ্রীলঙ্কান এবং ইন্ডিয়ানদের বিতারিত করার জন্য। কিন্তু একবারও দেখিনি তরুন প্রজন্মকে আহবান জানাতে, এসব সেক্টরে জয়েন করে মেধা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে ওদেরকে বিতারিত করার জন্য। মালিকপক্ষকে দেখান যে আমরা ওদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। তা না করে আমরা আহবান জানাই ওই সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে যারা নিজেদের স্বার্থে দেশকে বিক্রি করে দিতেও কার্পন্য করবে না। সত্যিই সেলুকাস, বড় বিচিত্র আমাদের এই দেশ।
আপনি কেন সেই সনাতন পন্থায় ওদের তাড়ানোর চিন্তা করছেন, নিজেকে কোয়ালিফাইড হিসেবে গড়ে তুলেন। আপনেকেই যেন ওয়ার্ল্ডের অন্য কান্ট্রি গুলো প্রোফেশনাল ম্যানেজার তথা টপ লেভেল এক্সিকিউটিভ হিসেবে হায়ার করে! আপনি কোয়ালিফাইড হলে ওরা এমনিতেই আপনার সামনে দাড়াতে পারবেনা।
সত্যি বলতেঃ
‘আমরা বাঙ্গালিরা সবাই পাগল, আর আমাদেরকে যারা চালায় তারা উম্মাদ’
ভাবতে পারেন আমি এমন কি যে এত্তকিছু বলছি, কেন বলছি কারন আমি আমার বুটেক্সকে তথা আপনাদেরকে ভালবাসি আর দ্বিতীয়টির উত্তর হচ্ছে
‘আমি অধম তাই বলে আপনি উত্তম হইবেন না কেন’